Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

চরাঞ্চলে মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনে স্যান্ডবার প্রযুক্তি

মিষ্টিকুমড়া সকলের প্রিয় একটি সবজি। এটিকে গরিবের পুষ্টি বলা হয়। বাংলাদেশে প্রায় সকল বসতবাড়ির আঙিনায় ২/১টি মিষ্টিকুমড়ার গাছ দেখা যায়। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। কচি মিষ্টিকুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পরিপক্ব ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়। পরিপক্ব  ফলের বিটা-ক্যারোটিন রাতকানা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মিষ্টিকুমড়া ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরিপক্ব ফলের প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে প্রোটিন ১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০০ মিগ্রা., ফসফরাস ৩০.০ মিগ্রা., বিটা ক্যারোটিন ৫০ মাইক্রো গ্রাম এবং ভিটামিন-সি ২.০ গ্রাম। এর কচি ডগা, পাতা এবং ফুল সবজি হিসেবে খুবই মুখোরোচক।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এবং অপরদিকে নদীতে চর জেগে উঠছে। চরের লোকদের দরিদ্রতার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে নদীভাঙন, মাটির অনুর্বরতা এবং স্থানীয় জাতের ব্যবহার অন্যতম। অধিকাংশ চরের জমিগুলো রবি মৌসুমে চাষের উপযোগী থাকে, কারণ এই সময় নদীর পানি নিচে নেমে যায় এবং চরগুলো জেগে উঠে। কিছু কিছু চর এলাকা বড় দ্বীপের মতোও হয়। এগুলো কখনও ডুবে যায় না। লোকজন সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। সেই সব চরে বিভিন্ন ধরনের     শাকসবজির চাষাবাদ হয়, তার মধ্যে মিষ্টিকুমড়া অন্যতম। চরাঞ্চলের পলি মাটিতে মিষ্টিকুমড়ার ফলন খুব ভালো হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের ১০টি জেলায় প্রায় ১,২০,০০০ দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও অপুষ্টি দূর করতে সক্ষম হয়েছে।
জাত পরিচিতি : বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বীজ বিক্রি হয় তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) হতে এ পর্যন্ত ৫টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ৩টি হাইব্রিড ও ২ টি মুক্তপরাগায়িত জাত রয়েছে। জাতগুলো হলো-
ক) বারি মিষ্টিকুমড়া - ১ (মাঝারি আকারের) খ) বারি        মিষ্টিকুমড়া- ২ (ছোট আকারের)
গ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া - ১ (মাঝারি আকারের)
ঘ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া - ২ (মাঝারি আকারের)
ঙ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া - ৩ (মাঝারি আকারের)
উক্ত মিষ্টিকুমড়ার জাতগুলোর মধ্যে বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-১ রংপুর, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলার দুর্গম চরে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা হতে উদ্ভাবিত জাতগুলো ফলের আকার, আকৃতি, শাঁস এর রঙ, শাঁসের মিষ্টতা, গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ইত্যাদির দিক থেকে অন্য যে কোন জাতের চেয়ে উৎকৃষ্ট। উক্ত জাতগুলো নিশ্চিতভাবে চরাঞ্চলে কৃষকের কাছে অধিক জনপ্রিয়তা পাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি প্রকল্পের মাধ্যমে উক্ত চরাঞ্চলসমূহে বারি উদ্ভাবিত সবজি জাতসমূহ প্রসারে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
চাষাবাদ পদ্ধতি : চরাঞ্চলে সবজি চাষাবাদ প্রক্রিয়া অন্য যে কোনো স্থানে চাষাবাদ পদ্ধতি হতে ভিন্ন, চরাঞ্চলে মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদের ক্ষেত্রে এক বিশেষ ধরনের চাষাবাদ কৌশলে অবলম্বন করতে হয় যাকে স্যান্ডবার (ঝধহফনধৎ) পদ্ধতি বলে। স্যান্ডবার  হলো নদীর পলি ও বালি দ্বারা প্লাবিত বড় অস্থায়ী ও উন্মুক্ত একটি স্থান যা বন্যার পর পরেই পানি নেমে যেয়ে তৈরি হয়। সাধারণত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে যখন নদীর পানি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে তখন স্যন্ডবার দৃশ্যমান হতে থাকে এবং স্যান্ডবার পদ্ধতিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ শুরু করা যায়। স্যান্ডবার চাষাবাদ পদ্ধতি হলো অনেকটা মাদাতে সবজি চাষের মতোই। এক্ষেত্রে ৭-৮ ফুট দূরে দূরে সারি করে ৩ ফুট গভীর ও ৩ ফুট চওড়া করে গর্ত তৈরি করতে হয়। উক্ত গর্তে ৫-৬ কেজি পচা গোবর/অন্য যে কোনো জৈব সার, টিএসপি ৭০ গ্রাম, এমপি ৩০ গ্রাম, জিপসাম ৪০ গ্রাম, জিংক সালফেট ৪ গ্রাম, বোরিক এসিড ৪ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৫ গ্রাম, পিটের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে    ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হয়। মিষ্টিকুমড়া দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং অনেক লম্বা সময়ব্যাপী ফল দিয়ে থাকে কাজেই এসব ফসলের সফল চাষ করতে হলে গাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। উক্ত পিটে ৪-৫টি বীজ বপন করতে হয় অথবা পলি ব্যাগে চারা করেও পিটে লাগানো যায় এবং প্রয়োজনীয় পানি দিতে হবে। চারা গজানোর পর ২টি চারা রেখে বাকি চারাগুলো তুলে ফেলে দিতে হবে। মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য পিটকে খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিতে হবে। চারা গাছের বয়স যখন ২৫ দিন হবে তখন প্রতি পিটে ৩৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এই ভাবে ৩৫ গ্রাম ইউরিয়া ৪০ দিন, ৬০ দিন ও ৭৫ দিন বয়সে পিটে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবারেই সার দেওয়ার পর পর পিট পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। মিষ্টিকুমড়া পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। বিশেষ করে ফল ধরার সময় প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে, ফল শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ পর্যন্ত ঝরে যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ৫-৭ দিন পরপর সেচ দেওয়া প্রয়োজন। মিষ্টিকুমড়া গাছকে মাটিতে বাইতে দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কচি ফল প্রথম থেকেই খড় বা শুকনো কচুরিপানার ওপর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, এতে করে প্রচÐ গরমে বালি উত্তপ্ত হয়ে গেলেও ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
বিশেষ পরিচর্যা  
শোষক শাখা অপসারণ ঃ গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলো গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি পর্যন্ত শাখাগুলো ধারালো বেøড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।
ফলধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন : মিষ্টিকুমড়ার পরাগায়ন প্রাকৃতিকভাবে প্রধানত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে মৌমাছির পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে মিষ্টিকুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ বাড়ানো যায়। মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে। ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টিকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯ ঘটিকার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারণ করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুÐে (যেটি গর্ভাশয়ের পেছনে    পাপড়ির মাঝখানে থাকে) ঘষে দেয়া হয়।  
ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : ফলের বোঁটা যখন খড়ের রং ধারণ করে তখনই মিষ্টিকুমড়া সংগ্রহ করা উচিত। এর পূর্বে সংগ্রহ করলে মিষ্টিকুমড়ার মান ভালো থাকে না এবং বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। পাকা ফল সংগ্রহের পূর্বে সেচ দেওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে। ফল সংগ্রহের ২/৩ সপ্তাহ পূর্বে সেচ দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে ফলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পাবে।
ফলন : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে উদ্ভাবিত জাতসমূহ যথাযথভাবে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩০-৫০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা : ফলের মাছি পোকা মিষ্টিকুমড়ার জন্য একটি মারাত্মক পোকা। স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাস খায়, ফল পচে যায় এবং অকালে ঝরে পড়ে এক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ আক্রান্ত ও পচা ফল জমিতে না ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ যৌথভাবে জমিতে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন কীটনাশক এর দোকানে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ সহজেই পাওয়া যায়। বিষটোপের জন্য থেঁতলানো ১০০ গ্রাম পাকা/আদা পাকা মিষ্টিকুমড়ার সাথে সেভিন পাউডার ০.২৫ গ্রাম এবং ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিষটোপ ৩/৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হবে।
পামকিন বিটল নামক আরেকটি পোকা মিষ্টিকুমড়ার চারা গাছের খুব ক্ষতি করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই পোকার কীড়া গাছের গোড়ায় বাস করে এবং শিকড়ের ক্ষতি করে বড় গাছ মেরে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ পোকা হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। যদি তাতে কাজ না হয় তবে ২ গ্রাম সেভিন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে চারা গাছে স্প্রে করতে হবে। কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২-৫ গ্রাম বাসুডিন/সানফুরান মাটিতে দিয়ে সেচ দিতে হবে।
মিষ্টিকুমড়াতে সবচেয়ে যে রোগটি বেশী দেখা যায় তা হলো সাদা গুড়া রোগ বা পাউডারী মিলডিউ। এক্ষেত্রে পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডার বা গুঁড়া দেখা যায়,  ধীরে ধীরে এ দাগগুলো বড় ও বাদামি হয়ে পাতা শুকিয়ে যায় এবং ফল ঝরে যেতে পারে । এ রোগ আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলে এবং প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম থিওভিট বা সালফোলাক্স/ কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিক্সিন ১৫ দিন পর পর ২ বার ¯েপ্র করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে ।
বর্তমানে মিষ্টিকুমড়াতে আরো একটি বড় সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা হলো ভাইরাস রোগ। এই রোগে আক্রান্ত পাতা সবুজ ও হলুদের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় এবং কচি পাতা আস্তে আস্তে কুঁকড়িয়ে যেতে থাকে। এই ভাইরাস রোগ কোন প্রকার ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেক্ষেত্রে একমাত্র পথ হলো ভাইরাস আক্রান্ত গাছ জমিতে দেখা মাত্রই তা জমি থেকে তুলে ফেলে দিতে হবে এবং ভাইরাস মুক্ত গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। তবেই কেবল মাত্র এ রোগ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
চরাঞ্চলে কৃষক ভাইয়েরা উপরোক্ত নিয়ম মেনে মিষ্টিকুমড়া আবাদ করলে আর্থিক ভাবে অনেক লাভবান হতে পারেন।  তবে এক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিক খেয়াল রাখতে হবে তা হলো হাইব্রিড জাতসমূহ ব্যবহার করলে কোনো অবস্থাতেই তার বীজ পরবর্তী বছর ব্যবহারের জন্য সংরক্ষন করা যাবে না। প্রতি বছর নতুনভাবে বীজ সংগ্রহ করে তা লাগাতে হবে, তবেই কেবল মাত্র ফলন ঠিক থাকবে। য়  

 

ড. বাহাউদ্দীন আহমেদ

ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, মোবা : ০১৫৫৬৩৬৩৯০১
ই-মেইল :bahauddinmed57@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon